শৈশবের স্মৃতি।

in hive-129948 •  6 days ago 

শুভেচ্ছা সবাইকে।

কেমন আছেন সবাই? আশাকরি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি।প্রত্যাশা করি সবাই সবসময় ভালো থাকেন-নিরাপদে থাকেন। আজ ৩১শে আষাঢ় ,বর্ষাকাল ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ। আজ শৈশবের একটি ঘটনা আপনারদের সাথে শেয়ার করবো।

c1.jpg

source

শৈশব কাল সকলের কাছে বেশ আনন্দের। শৈশবের কথা মনে হলেই মনে হয় যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই সময়ে তবে বেশ ভাল হতো।কিন্তু তা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু এখনও যখন সেই সময়ের কথা মনে পরে তখন বেশ ভাল লাগে। বেশ সুন্দর ছিল সেই দিন গুলো।বন্ধুদের সাথে কি সুন্দর সময় কাটিয়েছি। যেখানে ছিল কোন স্বার্থের টানা পোড়ন। ছিল নিখাত ভালবাসা।

আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা সরকারী কোয়াটারে। আর সরকারী কোয়াটার মানেই বিশাল মাঠ সম্মিলিত আবাসিক এলাকা। আমাদের কোয়াটার গুলো ছিল বিশাল এলাকা জুড়ে সেখানে ছিল বিশাল মাঠ। আর বিকাল হলে শুরু হতো বিভিন্ন ধরনের খেলা সেই মাঠে। পাশাপাশি দু'টো তিনতলা বিল্ডিং ছিল। আর থাকতো ১২টি পরিবার। সকলের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল সবার। আর অন্যান্য বিল্ডিংগুলো আমাদের বিল্ডিং থেকে দূরে। তাই এই ১২টি পরিবারের প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। একজনের বাসায় কিছু ভালো রান্না হলেই অন্যের বাসায় চলে যেত। কিন্তু আজকাল যা বিরল। আজকাল পাশের ফ্ল্যাটে কে থাকে তার খবরই রাখে না। আর তারকারির আদান প্রদান সেতো দূরের কথা।

সরাকারি কোয়াটার মানেই বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি করা। সবার বাসার সাথে থাকতো বিশাল খালি জায়গা। প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারই সেখাবে বাগান করত। আমার আব্বাও বেশ পছন্দ করতো বাগান করতে। তাই আব্বা অফিস শেষ করেই বাগানে কাজ করতে। বিভিন্ন সব্জির গাছ লাগাতেন আর আমরা লাগাতাম বাসার সামনের জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। তবে এই কাজটি বেশি করতো আমার ইমিডিয়েট বড় বোন।আব্বার করা সব্জি বাগানে বিভিন্ন সব্জি হতো। এলাকার প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারেই দেয়া হতো সেই সব্জি।তখন অতিরিক্ত সব্জি মানেই সবার বাসায় দেয়া। বিক্রির চিন্তা কারও মাথাও আসত না। আর সবার বাগানেই ছিল বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। যখন ফল পারা হতো কারও ফলের গাছ থেকে তখন সবার বাসায় বাসায় দেয়া হতো। আর আমরা ছোট বসে থাকতাম কখন ফল পারা শেষ আমাদের দেবে। এভাবেই আমরা বড় হয়েছি সরকারি কোয়াটারে। তবে মাঝে মাঝে বড়দের পাল্লায় পরে ফল চুরি করতাম। আর ভয়ে থাকতাম কখন ধরা পরে যাই। আর আব্বার কাছে বিচার আসে। কিন্তু আমি এতো ভিতু ছিলাম যে এ কাজে খুব কমই যোগ দিতাম।

এক অংকেল এর বাগানে বেশ মজার একটি পেয়ারা গাছ ছিল। আর প্রচুর ফল আসতো সেই সাথে পেয়ারা গুলো ছিল বেশ মজার। আংকেল যখন পেয়ারা পারতেন আমাদের ছোটদের সকলকে দিতেন।কিন্তু আমাদের মন ভরতো না। আমরা বাচ্চারা যাতে পেয়ার চুরি করতে না পারি এবং ভয় পাই তাই তিনি পেয়ারা গাছে কারেন্ট এর তার প্যাচিতে দিলেন। আর প্রচার করলেন যে গাছ কা্রেন্ট এর সংযোগ দেয়া আছে। যে পেয়ারা চুরি করতে যাবে সে কারেন্ট এর শর্ট খাবে। তাই আমরা কেউ সেই পেয়ারা চুরি করার সাহস দেখাতাম না। একদিন আমারদের এক বড় ভাই বাজি ধরলো যে সে সেই পেয়ারা চুরি করবে। আমরা নিষেধ করলাম।যদি কারেন্ট ধরে। কি সরল ছিলাম আমরা। বুঝতেই পারি নাই যে আংকেল আমাদের ভয় দেখানোর জন্য কারেন্ট এর তার প্যাচিতে রেখেছিলেন। কিন্তু বড় ভাই কোন নিষেধ শুনলো না। সেই সময় ছিল রোজার দিন। বড় ভাইয়া বললেন সবাই যখন ইফতার করবেন তখন সে চুরি করবেন। সেই মোতাবেক সে ইফতারের সময় পেয়ারা চুরি করলেন। গাছ যাতে না নড়ে সে জন্য সে পেয়ারা পেরেছেন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। ব্যাগ ভর্তি পেয়ারা পেরে নিয়ে আসলেন। রাতে আরেক ভাই এর বাসায় লুকিয়ে রাখলেন। পরদিন আমরা সবাই একটি জায়গায় মিলে ভাগ করে খেলাম। তখন আমরা বুঝলাম যে গাছে কোন কারেন্ট এর সংযোগ ছিল না। আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে। তবে মজার বিষয় হলো যে সেই চুরি কেউ জানতেও পারেনি। আপনাদেরও নিশ্চয়ই এমন অনেক মজার স্মৃতি রয়েছে শৈশবের। আমাদের শৈশব ছিল খেলাধুলায় ও এ ধরনের অনেক মজার স্মৃতিতে পুর্ণ। যা আজকালকার বাচ্চারা চিন্তাও করতে পারে না। সবাই কেবল মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। আর কৃত্রিম ময় তাদের জীবন।

আজে এই পর্যন্ত।আবার দেখা হবে নতুন কোন ব্লগ নিয়ে। সবাই ভালো অ নিরাপদে থাকুন। নিজের যত্ন নিন ও পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুদের খেয়াল রাখুন। শুভ রাত্রি।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেনীডাই পোস্ট
পোস্ট তৈরি@selina 75
তারিখ১৫ই জুলাই, ২০২৫ ইং
মোবাইলRedmi Note 5A
লোকেশনঢাকা,বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

আমি সেলিনা আখতার শেলী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি। স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা। এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

image.png

image.png

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

আপনার শৈশবের সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা এবং সমাজের বন্ধনের কথা পড়ে আজকের ডিজিটাল যুগে একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার কথা মনে পড়ল।আপনার লেখায় প্রকৃতির সাথে বেড়ে ওঠার যে সুন্দর অভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে, তা আজকের শহুরে শিশুদের জন্য খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক।

অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি শৈশবে।যা এখনকার বাচ্চারা পায় না।

xp1.png

xp2.png

xp3.png

xp4.png

image.png

আপনার শৈশবের স্মৃতি খুব ভালো লাগলো। লেখাটা পড়ে আমাদের ছোটবেলার দিনগুলো মনে পড়ে গেল। সেই সময়ের খেলা, ফল চুরি, একসাথে মজা করার দিনগুলো আজ আর ফিরে আসে না। আজকাল বাচ্চারা এসব স্মৃতি কল্পনাও করতে পারে না। দারুণ সুন্দর একটি লেখা।শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

এখনকার বাচ্চারা এ ধরনের কথা শুনলে বলবে বানিয়ে বানিয়ে বলছি। তাদের জীবন আমরা মোবাইলে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছি।