হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে সাজানো সংসার গল্পের ত্রয়োদশ পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, গল্পের ত্রয়োদশ পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সোর্স
প্রদীপ ঘরজামাই থাকার কারণে সে সব সময় তার বউয়ের এবং শ্বশুরের কথা মত উঠতো বসত। প্রদীপের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া পাওয়া ছিল না।শ্বশুরের সংসারে তার কোন কথাই কেউ শুনতো না। প্রদীপ ছিল অত্যন্ত লোভী সে টাকার বিনিময়ে তার মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়েছে।সে শ্বশুরবাড়ি ঘর জামাই ছিল একটি মাত্র কারণে। কারণ সে জানে তার শশুর যখন মারা যাবে তখন এই বিশাল সম্পত্তির একমাত্র মালিক সেই হবে। এই সবের মধ্যে থাকতে থাকতে প্রদীপ ভুলে গিয়েছিল তার পরিবারের কথা। আগে প্রদীপ মাসে মাসে যে টাকা পরিবারকে দিত বর্তমান সে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রদীপের টাকা বন্ধ করে দেওয়ার পর রাকেশের খুব কষ্ট হয় সংসার চালাতে। দিন যত যেতে থাকে ততই সংসারের খরচ বাড়তে শুরু করে। একদিকে বাবার ওষুধের খরচ অন্যদিকে লক্ষীকে ডাক্তার দেখানোর খরচ। লক্ষ্মী ছিল গর্ভবতী প্রতি মাসে মাসে তাকে ডাক্তার দেখাতে হতো আর সব সময় পুষ্টিকর খাবার তাকে খাওয়াতে হতো। রাকেশের কষ্ট হলেও সে সব সময় মুখে হাসিটা ধরে রাখত কাউকে বুঝতে দিত না তার কতটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু একমাত্র তার কষ্ট বুঝতে পারত তার মা। তার মা বুঝতে পারত প্রদীপ এখন আর সংসারে টাকা পাঠায় না। তার মা রাকেশের কাছে যতবার শুনতো প্রদীপ টাকা পাঠিয়েছে কিনা রাকেশ সবসময় তার মাকে বলতো প্রদীপ টাকা পাঠিয়েছে।
একদিন রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে রাকেশ তখন ও বাড়ির উঠানে অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক তখন পিছন থেকে তার মা তার কাঁধে হাত দিয়ে বলে কি হয়েছে রে রাকেশ?রাকেশ চমকে ওঠে তার মাকে বলে, কিছু হয়নি মা তুমি এত রাতে কি করছো এখানে? মা বলে, সন্তানের যদি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে না পারে তাহলে কোন মা কি ঘুমাতে পারে। রাকেশ বলে, মা তুমি শুধু শুধু চিন্তা কর এত করে বলেছি তোমাকে চিন্তা না করতে তবুও চিন্তা কর। মা বলে, ওরে রাকেশ তুই কি মানুষ না অন্য কিছু? রাকেশ বলে, এসব কি বলছো তুমি? মা বলে, দিনের পর দিন তুই আমাকে মিথ্যা কথা বলে গিয়েছিস। রাকেশ বলে, আমি কখনো আমার মাকে কোনদিন মিথ্যা কথা বলিনি। মা বলে, তুই বলেছিস। রাকেশ বলে, আমি যখন বুঝতে শিখেছি সেদিনের পর থেকে আমি আমার মাকে কোনদিন মিথ্যা কথা বলিনি। কি কারনে মাগো তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে মিথ্যা বলেছি? মা বলে, প্রদীপ এখন আর সংসারে টাকা পাঠায় না এ কথাটা তুই আমার কাছ থেকে লুকিয়েছিস। প্রদীপের সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগ তোর এখন আর হয় না। কেহ যেন বুঝতে না পারে তার জন্য তুই কঠোর পরিশ্রম করছিস আর বাড়িতে এসে হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছিস। কিন্তু আমি তো তোর জন্মদাত্রী মা আমার কাছ থেকে তুই কি করে লুকাবি বল।
রাকেশ মায়ের দুপা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। আর বলতে থাকে মাগো তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমার কাছ থেকে সত্যিটা লুকিয়েছি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম মায়ের কাছ থেকে কোনদিন কোন কিছু লুকানো যায় না। মা তুমি বলো আমি কি করতাম যে ভাইকে এত কষ্ট করে মানুষ করেছি সে ভাই এখন আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে না। যে ভাইকে নিয়ে আমি এত গর্ব করতাম সে ভাই আজ আমার পরিচয় দেয় না। যে ভাই কে তুমি আদর করে ভাত মাখিয়ে খাইয়েছো সে ভাই একটা বার শুনে না মা কেমন আছে। যে ভাইয়ের কথা বাবা সব সময় বলতে থাকে তার সামনে আমি কি করে বলব যার কথা বলছো তুমি সে তোমাকে দিনের একটা মুহূর্ত মনে করে না। মা বলে, উঠে পড় রাকেশ আমি তো জানি তোর এই বুকের ভিতর কত কষ্ট তুই জমিয়ে রেখেছিস। আমরা কষ্ট পাবো সে কথা জেনে সব কথা বুকের ভিতর জমিয়ে রেখেছিস। আমি তোকে আশীর্বাদ করছি তোর এই দুঃখ কষ্ট একদিন সুখে পরিণত হবে। আর যার জন্য তুই তোর জীবনটা উৎসর্গ করলি সে মানুষটা যখন তোকে বুঝলো না।আমি তাকে অভিশাপ দিচ্ছি তার কোনদিন ভালো হবে না। রাকেশ বলে, মা তুমি চুপ কর তুমি ওকে অভিশাপ দিওনা,ও তোমার ছেলে,ও আমার ভাই,ও ভালো থাকুক এটাই আমি চেয়েছি সারাটি জীবন। মা বলে, আগে যদি জানতাম ও অমানুষে পরিণত হবে তাহলে জন্মের পরপর ওকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম। এই বলে মা ঘরের ভেতরে চলে যায়। আর রাকেশ বলতে থাকে মাগো তুমি একি বলে গেলে তোমার এই মুখের কথা প্রদীপের জীবনে অভিশাপ নেমে আসবে।