স্মৃতিচারণ: শৈশবের বর্ষাকালে পাড়ার ছেলেদের সাথে পানিতে ফুটবল খেলার স্মৃতিচারণ

in hive-129948 •  4 days ago 

আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
রবিবার, ২০ ই জুলাই ২০২৫ ইং

আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদের কে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের ন্যায় আজকে আপনাদের সাথে শৈশবের স্মৃতিচারণ শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক বেশি ভালো লাগবে।তো চলুন এবার শুরু করা যাক।


IMG_0262.jpeg

Source

আমাদের গ্রামের ভেতরেই ছিল একটি ছোট্ট আমবাগান। গাছে গাছে ছায়া, এই বাগানটাই ছিল আমাদের ছেলেবেলার জগৎ। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে আমরা দৌড়াদৌড়ি করতাম, গাছে চড়তাম, পাকা আম পাড়তাম। তবে বর্ষাকাল এলেই এই আমবাগান হঠাৎ করেই এক নতুন রূপ নিত। টানা বৃষ্টিতে যখন চারদিকে পানি জমে যেত, তখন এই বাগান হয়ে উঠত এক বিশাল জলাশয়। কাদা মাটির মধ্যে পানির এক ধরণের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত, গাছের গুঁড়িগুলো অর্ধেক ডুবে থাকত পানিতে। এই সময়টাই ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের।পাড়ার ছেলেরা সকালবেলা দল বেঁধে হাজির হত বাগানে।

হাতে ফুটবল, গায়ে পলিথিনের তৈরি রেইনকোট আর চোখে খেলার ঝিলমিল উত্তেজনা। কাদামাখা মাঠ আর জমে থাকা পানির মধ্যে আমরা ফুটবল খেলতাম যেন ওটাই কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। বলটা একটু দূরে গেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরতাম। কেউ পা পিছলে পড়লে সবাই মিলে হাসিতে ফেটে পড়তাম। খেলার সময় কার পা কেটেছে, কার জামা ছিঁড়েছে কিংবা কে কাদার মধ্যে পড়ে গিয়ে পুরোপুরি কাঁদাময় হয়ে গেছে সেইসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তখন এতটুকু চিন্তা ছিল না।বলটাও সবসময় সোজা চলত না। পানির মধ্যে বল যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে যেত।

তখন সবাই মিলে দৌড়ে বলটাকে থামানোর চেষ্টা করতাম। কখনো বলটা বাগানের পাশের পুকুরে পড়ে যেত, তখন সাহসী কেউ একজন ঝাঁপ দিয়ে নিয়ে আসত। আবার অনেক সময় হঠাৎ কোনো গরু বা হাঁস ঢুকে পড়ত মাঠে সেটাই হতো নতুন মজার ঘটনা। মাঝেমধ্যে গাছ থেকে ঝরে পড়া কাঁচা আম বা মাটিতে ভেসে থাকা পাকা আম তুলে খাওয়াটাও ছিল একটা বাড়তি আনন্দ।বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মাথার ওপর ঝরে পড়ত, চুল থেকে গড়িয়ে পড়ত চোখে মুখে। কিন্তু খেলাটা থেমে থাকত না। কাদা লেগে গা একেবারে কালচে হয়ে যেত, ঠান্ডায় কাঁপত শরীর, তবুও সেই খেলাধুলায় যে উত্তাপ ছিল, তা সবকিছুকে উড়িয়ে নিয়ে যেত।

ঘরে ফেরার সময় প্রায়ই মায়ের ধমক খেতে হতো। এই বৃষ্টির মধ্যে খেলতে যাস ক্যান? ঠান্ডা লাগব না? এই কথা শুনেও মুখে একচিলতে হাসি লুকিয়ে রাখতে পারতাম না। মা গরম পানি দিয়ে গা ধুইয়ে দিতেন, আর রান্নাঘর থেকে আসত গরম খিচুড়ির গন্ধ। তখন মনে হতো, জীবনের সব সুখ বুঝি এই বৃষ্টিভেজা ফুটবল খেলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে।এখন যখন শহরের জানালায় বসে বর্ষার দিন দেখি, তখন সেই আমবাগান, সেই কাদা-পানির মাঠ, আর সেই ফুটবল খেলার দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই দিনগুলো ফিরে পাওয়া সম্ভব না, কিন্তু মনে যত্ন করে রাখা যায়।

আজও মনে হলে মনটা কেমন হু হু করে ওঠে, যেন হৃদয়ের এক অদেখা কোণে সেই বৃষ্টিভেজা শৈশব এখনো কাদার মধ্যেই ফুটবল খেলছে, হাসছে, ছুটছে।সেই বৃষ্টিভেজা মাঠটা নেই, সেই ছোট্ট বন্ধুগুলো এখন যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু স্মৃতির পাতায় তারা আজও কাদার ভিতরেই পা ছোঁড়ে বলের পেছনে ছুটছে। আর আমি শুধু একা বসে তা মনে করে মুচকি হেসে ফেলি।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

2FFvzA2zeqoVJ2SVhDmmumdPfnVEcahMce9nMwwksSDdRvZ6f4GKSwLn3BBFmPFifbbr21AhPTJ7XiTPJGbzxXNzpL3AeDnWebvp5DxFE241B8HGEVAqqCDY5m5Sn.png

Vote@bangla.witness as witness

54TLbcUcnRm3sWQK3HKkuAMedF1JSX7yKgEqYjnyTKPwrcNLMcZnLnFrW5PDaQKxbWWqwrRezSAe39S7RTiEk7NCzgzD1reVavwZGUMbjasjujy1CQqSedvtuVGKXod3vcdSqiXp2.png

Or

Set@rme as your proxy

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WEX4nZPQpSChVhr5YUqUeT6qhYr1L6PMHKqtRnepY2a8e1tqsDtWfr4V8KDGvJtydqvz4V68PMUyu9EWpez2.png


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

1728830339945~3.jpg

আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি একজন ছাত্র, আমি আসন্ন এইচএসসি সমমান পরীক্ষা শেষ করে দিনাজপুর সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড।আমি ফটোগ্রাফী ও ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাই। শৈশবের সুন্দর স্মৃতিগুলোও যতবার মনে আসে ততবার মনটা হু হু করে কেঁদে ওঠে। ফিরে যেতে চাই মধুর শৈশবে। এরকম দৃশ্য আমরাও দেখেছি। পাড়ার ছেলেরা মিলে পুকুরে নেমে ফুটবল খেলতো। শৈশবের সুন্দর মুহূর্ত নিয়ে দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।