আজ -২০য় আষাঢ় | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
মানুষের একটা অদ্ভুত স্বভাব আছে— যা নেই, সেটাকে পাওয়ার চেষ্টা, আর যা আছে, সেটা অবহেলা করা। জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে আমরা এমন অনেক কিছু চাই, যা হয়তো খুব দূরে, হয়তো খুব উজ্জ্বল, হয়তো শুধু চোখ ধাঁধানো। অথচ আমাদের পাশে যে ভালোবাসা, যে মানুষ, যে সম্পর্ক, যে শান্তি— সেগুলোকে আমরা ধীরে ধীরে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে দিই।
একসময় মনে হয়, দূরের কিছুই আমাদের সুখ এনে দেবে। নতুন কিছু, অন্যরকম কিছু, আলাদা কিছু— এর পিছনে ছুটতে ছুটতে আমরা পাশের মানুষটাকে ভুলে যাই, যে চুপচাপ থেকে ভালোবেসে যাচ্ছিল। আমরা তাকাই দূরের দিকে, যেখানে হয়তো আলো আছে, জৌলুস আছে, অন্যরকম একটা চাহিদা আছে। কিন্তু সেই আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে আমরা বুঝি না, পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে-ই আমাদের সবচেয়ে আপন।
আমরা চাই দূরের শহর, দূরের মানুষ, দূরের স্বপ্ন। অথচ ঘরের ভেতর যে মানুষটা আমাদের ভালোবেসে, অপেক্ষা করে, কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছে— তাকে বুঝি না। আমরা ভাবি, ও তো আছেই। যেটা সহজে পাওয়া যায়, সেটার দাম কমে যায় চোখে।
যেমন ধরুন, একটা সম্পর্কের কথা। শুরুতে যে মানুষটা আমাদের কাছে খুব আপন ছিল, যার জন্য সব করতে পারতাম, সেই মানুষটার অভ্যস্ত ভালোবাসা এক সময় আমাদের চোখে ম্লান লাগে। তখন আমরা নতুন কিছু খুঁজি— নতুন সম্পর্ক, নতুন বন্ধুত্ব, নতুন মানুষ, যারা হয়তো কিছুটা ভিন্ন। মনে হয়, ওরা বেশি বোঝে, বেশি দেয়, বেশি ভালোবাসে।
কিন্তু সত্যি কি তাই? যাকে আমরা দূর থেকে এতটা মূল্য দিচ্ছি, সে কি আসলে আমাদের জন্য অনুভব করে? যে আমাদের কাছেই ছিল, তাকে কি আমরা সুযোগ দিয়েছিলাম ঠিকভাবে বোঝানোর?
এই অভ্যাসটা আমাদের জীবনের সব জায়গায়— শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়। আমরা আমাদের নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি, নিজের খাবার, নিজের জায়গাকে ছোট করে দেখি। ভাবি, বাইরে সব ভালো, অন্যদেশে গেলে শান্তি, বিদেশি খাবার খেলেই স্ট্যাটাস। অথচ নিজের দেশের ঐতিহ্য, মায়ের হাতে বানানো ভাত, পুরোনো পাড়ার চায়ের দোকান— এগুলোই একদিন বেশি আপন হয়ে ওঠে, যখন দূরে যাই।
আমরা অনেক সময় এমন কিছু চাই, যেটা হয়তো শুধু চোখে ভালো লাগে। কিন্তু যেটা হৃদয় ছুঁয়ে থাকে, সেটা আমাদের চোখে পড়ে না। তার কারণ, আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাই পাশে থাকা জিনিসগুলোর সঙ্গে। অভ্যস্ততা ধীরে ধীরে গুরুত্ব কমিয়ে দেয়, আর এই ভুলটাই আমরা বারবার করি।
পাশের মানুষটা যখন আর আগের মতো সময় চায় না, অভিযোগ করে না, তখন আমরা বুঝি— ওর ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তখন আমরা বুঝতে পারি, যতক্ষণ পাশে ছিল, ততক্ষণ আমরা গুরুত্ব দিইনি। তখন আমরা চাই ফিরে পেতে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।
এমনকি নিজের প্রতিভাকেও আমরা উপেক্ষা করি। অনেকের ছবি আঁকার হাত ভালো, কেউ সুন্দর গান গায়, কেউ লিখতে পারে— কিন্তু পাশে কেউ যদি প্রশংসা করে, মনে হয়, সে তো চেনে বলেই বলছে। অন্য কেউ যদি বলে, তখন বিশ্বাস করি। নিজের জিনিস, নিজের অর্জন, নিজের অনুভূতিকে আমরা গুরুত্ব দিতে শিখিনি।
জীবনে শান্তি আসলে খুব সাধারণ জায়গা থেকে আসে। যে মা প্রতিদিন ভোরে উঠে আমাদের জন্য নাশতা বানায়, যে বাবা দিনের পর দিন অফিস করে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালায়, যে ভাই পাশে থেকে চুপচাপ সাহায্য করে, যে বন্ধু প্রতিদিন খোঁজ নেয়— এদের ভালোবাসার কোনো বাহার নেই, কিন্তু সত্যি বলতে, এদের ছায়ার নিচেই আমরা বাঁচি।
তবুও আমরা তাকাই দূরের দিকে। ইনস্টাগ্রামে দেখা কোনো বিদেশি জীবন, কারও স্টাইলিশ বন্ধু, কারও দামি গাড়ি— এসব দেখে আমরা নিজেদের জীবনকে ছোট মনে করি। অথচ জানি না, যার ছবিতে এত রঙ, তার মনেও হয়তো অন্ধকার জমে আছে।
সবচেয়ে বড় ভুলটা আমরা বুঝি যখন হারিয়ে ফেলি। যখন পাশে থাকা মানুষটা চলে যায়, তখন টের পাই, আমরা কী হারালাম। তখন মনে হয়, আরেকটু যদি বুঝতাম, আরেকটু সময় দিতাম, তাহলে এমন হতো না।
আমরা যদি সময় থাকতে বুঝি, তাহলে দূরের দিক না তাকিয়ে পাশে তাকালেই অনেক শান্তি পেতে পারি। যাকে আমরা প্রতিদিন দেখছি, তার চোখেও অনেক ভালোবাসা জমে থাকে— শুধু সেটা বোঝার দরকার। যেটা প্রতিদিন পাই, সেটার ভিতরেই অসীম মূল্য লুকানো থাকে— শুধু খুঁজে নেওয়ার মানসিকতা চাই।
শেষ কথা হলো, দূরের কিছু দেখে প্রলুব্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু কাছে থাকা জিনিসগুলোকে অবহেলা করলে একদিন হাত থেকে ফসকে যাবে। তখন দূরের আলোয় আর মন ভরে না, তখন শুধু খালি জায়গাটা পোড়ে।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit