আসসালামু আলাইকুম
আজকের দিনটা ছিল সত্যিই বিশেষ। ছোট ছোট কাজের ভিতর লুকিয়ে ছিল এক ধরনের প্রশান্তি, ছিল সৃষ্টির আনন্দ আর ছিল পরিবারকে ভালো কিছু খাওয়ানোর এক অদ্ভুত তৃপ্তি।
আমি গ্রামের বাড়িতে এসেছি কয়েক মাস হল আর এখানকার প্রকৃতি পরিবেশ আর কাজের ছন্দ একেবারে আলাদা শহর জীবনে তুলনায়।প্রতিটি দিন যেন নিজেই হয়ে ওঠে একটা গল্প, আর আজকের দিন ছিল তার একটি সোনালী অধ্যায়। সকালবেলাটা এখানে একেবারে শান্ত আর নির্মল। পাখির ডাক আর হালকা বাতাসে শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। আমি ঘুম থেকে উঠে প্রথমে বারান্দায় বেরিয়ে এলাম। গ্রামে থাকা সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে এই বারান্দার প্রশান্তি। দিগন্ত জেলার সবুজ মাঠ গাছে গাছে ঝুলে থাকা শিশির বিন্দু আর দূরের গরুর ঘন্টা সবকিছু মিলিয়ে যায় এক প্রকৃতির গাথা সুর।
তারপর আমি নিজের দিকে মনোযোগ দিলাম। চুলটা সুন্দর করে সাইজ করে পরিষ্কার করলাম।ব্রাশ করে হাতমুখ ধুয়ে নিজেকে পরিপাটি করলাম। বারান্দা ঝাড় দিলাম উঠোন ঝাঁড় দিলাম এরপর চুলার ছাই পরিষ্কার করে রান্নাঘরে ঢুকে গেলাম। আজকে রান্না একটু ব্যতিক্রম হবে সেটা আগেই ভেবেছিলাম। প্রথমেই ভাত আর সাধারণ তরকারি রান্না করলাম সকালের জন্য। এরপর শুরু হল আজকের বিশেষ আয়োজন এর প্রস্তুতি।
আমি আজকে এমন একটি আইটেম তৈরি করব যেটা আমাদের এলাকায় অনেকের প্রিয়, আর যার স্বাদ একবার কেউ পেলে ভুলতে পারেনা সহজে।যেহেতু আমার ব্লেন্ডার এর কাজ এই আইটেমটা তৈরি করার ক্ষেত্রে তাই আমি আইটেমটা তৈরি করার আগে আমার আরেকটা কাজ সেরে ফেললাম, সেটা হল বেশ কয়েকদিন হচ্ছে আমার শাশুড়ি অনেক গুলো জিরা সাদা এলাচ কালো এলাচ ডালচিনি সবকিছু নিয়ে এসেছে ব্লেন্ডারে সুন্দর করে ব্লেন্ড করার জন্য।
তাই আমি মসলাগুলো খুব সুন্দর ভাবে আগুনের আচে ভেজে নিলাম। এরপর শুরুতেই আমি মসলাগুলো খুব সুন্দর ভাবে গুরো করে নিলাম। এরপর নিলাম একটি বিশেষ পাতা যেটাকে আমরা বলি গন্ধ ওয়ালা পাতা,বা আমাদের গ্রামের ভাষায় গোম ভাজিলের পাতা বলে থাকি। আমি জানি বিভিন্ন এলাকায় এটার নাম আলাদা হতে পারে কিন্তু এই পাতার ঘ্রাণ স্বাদ আর এর উপকারিতা সবকিছুই এক কথায় অসাধারণ।
আমি চাল আর ডাল ভিজিয়ে রেখেছিলাম আগেই। সেগুলো আজ পুরোপুরি নরম হয়ে গিয়েছে। এরপর চাল, ডাল, পাতা গুলো খুব সুন্দর করে কুচি কুচি করে কেটে পাতাগুলো সাইড করে রেখে চাল, ডাল সুন্দর করে ব্লেন্ডার করে একটি মিশ্রণ তৈরি করলাম। এই মিশ্রণে দিলাম আগেই প্রস্তুত করে রাখা মসলাগুলো লবণ কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ কুচি আর প্রয়োজনে একটু আদা রসুন বাটা। তারপর পাতা সহ সবকিছু মিশিয়ে তৈরি করলাম বড়ার ব্যাটার। চুলায় তেল গরম করে শুরু করলাম বড়া বানানো। হাতের তালুতে এক একটা করে ছোট ছোট বড়া গোল করে বানিয়ে ফেলছিলাম। তেলে পড়া মাত্রই চু চু করে শব্দ করে বড়াগুলো ফুলে উঠছিল। এই বড়া গুলো দেখতে কালো কালার।
ভাজলে আরও বেশি কালো হয়। সুবাসে পুরো রান্নাঘর ভরিয়ে গিয়েছিল। একটার পর একটা বড়া ভাছতে মনে হচ্ছিল যেন আমি নিজেই একটা নতুন স্বাদ সৃষ্টি করছি। বড়াগুলো ভাজা শেষ হলে একটা বড় থালায় সাজিয়ে সবাইকে ডেকে খেতে দিলাম। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ভাগিনা ননাস সবাই অনেক তৃপ্তি ভরে খেলো।সবাই খেয়ে এক বাক্যে প্রশংসা করল। অনেক ভালো হইছে। খেতে অনেক মজা লাগছে। এই প্রশংসা গুলো যেন আমার সারা দিনের পরিশ্রমেরর সবচেয়ে মধুর পুরস্কার হয়ে উঠল।
আমি অনুভব করলাম রান্না শুধু পেট ভরানোর জন্য না এটা একটা শিল্প। এর ভিতর দিয়ে ভালোবাসা যত্ন স্মৃতি সব কিছু মিশে যায়। প্রতিটি উপাদান শুধু খাদ্য নয় সেটা হয়ে ওঠে আবেগের রং পৃথিবীতে এক একটা মুহূর্ত। বিকেলের দিকে আমি আবার বারান্দায় গিয়ে একটু বসে ছিলাম। তখন সূর্যটা একটু হেলে পড়েছে পশ্চিমে। হালকা বাতাস বইছিল। হাতে এক কাপ চা নিয়ে আমি ভাবছিলাম আজকের দিনটার কথা। সকালের শান্ত বারান্দা থেকে শুরু করে নিজের যত্ন নেওয়া রান্নাঘরের ব্যস্ততা আর এক একটা বড়া ভাজার আনন্দ সব মিলিয়ে একদিনে কত কিছু ঘটে যায় আমাদের জীবনে। এই দিনটা আমার কাছে শুধু কাজে ছিল না এটা ছিল একটা পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা।
নিজের হাতে কিছু তৈরি করে পরিবারকে খাওয়ানোর আনন্দ প্রশংসা পাওয়ার তৃপ্তি আর নিজেকে সময় দেওয়ার যে শান্তি প্রায় এক কথায় বলে বোঝানো যাবে না। ছোট ছোট কাজের মাঝেই লুকিয়ে থাকে জীবনের বড় আনন্দগুলো। আজকের এই দিনটা আমাকে তা নতুন করে বুঝিয়ে দিল। আমি কৃতজ্ঞ আল্লাহর কাছে এমন একটি পরিপূর্ণ দ্বীনের জন্য যে দিনটিকে আমি শুধু অনুভব করিনি বরং উপভোগ করেছি পুরো হৃদয় দিয়ে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Hello @samima1! 👋
Congratulations! This post has been upvoted through @steemcurator05. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.
Curated by: mohammadfaisal
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit