বৃষ্টি ভেজা বিকেলের অভিমান

in hive-120823 •  3 months ago 

আসসালামু আলাইকুম
আজকের এই দিনটা যেন শুরু থেকেই অন্যরকম। আমি এখন যে বাসায় আছি সেখানে মাত্র একটি বছর হলো এসেছি। অথচ মনে হচ্ছে বহু বছর ধরে এ বাড়ির প্রতিটা কোন আমার আপন হয়ে গেছে। দেয়ালের হালকা রং পর্দার নরম শোয়া বারান্দার বাতাস সবকিছুতে যেন এক মায়ার ছোয়া লেগে আছে।

এত অল্প সময়ে এতটুকু ভালবাসা কেন জমে গেল নিজেই বুঝে উঠতে পারছি না। এই বাসাটা অনেক বড় মনের মত একটা আশ্রয় ছিল। হাজবেন্ডের হাসিমুখ মেয়ের খুনসুটি আর নিজের নিঃশ্বাস ফেলার একটু শান্তির জায়গা সব মিলিয়ে একটা পরিপূর্ণ ঘর। কিন্তু আজ মনটা ভীষণ ভার। সকাল থেকেই যেন একটা অজানা কষ্ট বুকের ভিতর ছুটে বসে আছে। দুপুর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি যেন আমার মনের ঝড় বুঝে ফেলেছে। টুপটাপ শব্দে জানালার কাচে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা গুলো একেকটা শব্দের আহাজারির মতো। আমার শ্বশুর বাড়ি কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার।

কবে থেকে যেন স্বপ্ন ছিল বিয়ের পর শাশুড়ি আমার মায়ের মত হবে। আদর করবেন পরামর্শ দেবেন মাথায় হাত বুলিয়ে বলবেন তুই আমার মেয়ের চেয়েও আপন। কিন্তু বাস্তবতার সব সময় তো স্বপ্নের মত হয় না। সবার শাশুড়ি তো আর মা হতে পারে না হতে চানও না। কিছু কিছু সম্পর্কে দূরত্ব থেকেই যায়, না কাছের,না পুরোপুরি পর। আমার শাশুড়ি আমাকে অপছন্দ করেন এমনও না,তবে খুব বেশি ভালোবাসেন এমনও না। মুখে হাসি থাকলেও মনে মায়া নেই। কাজের ভুল ধরেন, কথায় কথায় তুলনা করেন কখনো গাল ভরা প্রশংসা বা সাহায্য দেন না। অথচ আমি কত চেষ্টা করেছি কতবার ভেবেছি যদি একটুখানি কাছে টেনে নেন আমি মায়ের অভাব ভুলে যাবো।

কিন্তু দিনশেষে বলেছি ভালোবাসা চাওয়া যায় আদায় করা যায় না। নিজের মতো করে চলাফেরা করতে পারি না সবকিছুতেই তার কথা বলতেই হবে। এতদিন আমি আপনাদের সাথে এসব শেয়ার করিনি কিন্তু আজ সবকিছু কেন জানি খুলে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে ভীষণ মনটা চাইছিল। যাইহোক এই বাসাটায় ফিরে আসার পর থেকে একটু শান্তি পাই। এখানে কারো মন বুঝে চলতে হয় না। কেউ হিসাব রাখে না আমি কখন ঘুমালাম কখন রান্না করলাম বা কার কার সাথে কতক্ষণ ফোনে কথা বললাম বা কি খাইলাম।

এখানে আমার মেয়ের খিল খিল হাসি হাসবেন্ডের চিন্তা মুক্ত চেহারা আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। আজ দুপুরে যখন বৃষ্টি পড়ছিল আমি এক মনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। নিচে রাস্তায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নাচছিল চিৎকার করছিল আর আমি ভেতরে ভেতরে চুপচাপ কাঁদছিলাম। আমার চোখের জল কেউ দেখেনি কিন্তু আকাশ বুঝে গেছে। সেই থেকেই যেন নির্বধে ঝরছে আমার মতই একাকী। এমন দিনগুলোতে মাকে খুব মনে পড়ে। তার কোলে মাথা রাখার শান্তি তার রান্নার গন্ধ আর এক কাপ চায়ের সাথে তার ভালোবাসার ভরসার কথা সব আজ দূরে। কষ্ট পেলে আগলে রাখার মানুষ নেই এখন। শাশুড়ির কাছে আশা করেছিলাম মায়ের ছায়া পাব কিন্তু তেমনটা হলো না।

শাশুড়ি তো শাশুড়ি,শাশুড়ি আসলে কখনো মা হয়ে ওঠে না। তার কাপড় ধুয়ে দেওয়া তার বিছানা চাদর ধোয়া থেকে শুরু করে কত কিনা তার জন্য করলাম কিন্তু তার কখনো মনটা পাইলাম না। শুধু শাশুড়ির না শ্বশুরের কাপড় ধুয়ে দেওয়া সব কিছু করে মন জুড়ে চলেও তার কখনো মন পেয়ে ওঠেনি আজ পর্যন্ত। হয়তো কখনো ভালো ব্যবহার করে আবার কখনো তার মুখের দিকে তাকানো যায় না এমন ব্যবহার করে। তবে এই বৃষ্টি ভেজা বিকেলে আমার মেয়ে এসে আমার কোলে চুপচাপ বসে পড়ল। ওর নরম হাতে মুখটা ছুয়ে বলল আম্মু তুমি কাঁদো কেন? তখন বুঝলাম আমার সত্যিকারের আপন তো আমার কোলে। তার ভালোবাসা তার স্পর্শ আমাকে বারবার ভরিয়ে দেয়। আসলে জীবন আমাদের সব আশা পূরণ করে না।

কিন্তু কিছু অপূর্ণতা থেকেই আমরা নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে শিখি। এই বাসাটা এই ছোট্ট পরিবারটা আমার জন্য অনেক কিছু। শ্বশুরবাড়ির অভিমান শাশুড়ির অবহেলা হয়তো থাকবে কিন্তু এই মায়া ভরা আশ্রয় আমাকে আবার বাঁচতে শেখায়। বৃষ্টি ভেজা এই বিকেল তাই আমার একান্ত অনুভবের দিন। একটা নীরব-অভিমান আবার একরাশ নীরব ভালোবাসার কাহিনী। জীবনে অনেক কিছু আমাদের মত না হলেও কিছু কিছু জায়গা ঠিক আমাদের নিজের মত হয় যেখানে আমরা সত্যি আপন হয়ে বাঁচি। আজকের এই বৃষ্টি সেই কথাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। আর মনের ভেতরটা শুধু হু হু করে কেঁদে উঠছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...

আমরা যখন একটানা দীর্ঘ সময় ধরে কোন জায়গায় থাকি তখন সে জায়গাটি অনেক আপন হয়ে যায় যদি সেখান থেকে হঠাৎ করে চলে যায় তাহলে মনে হয় নিজের অনেক কাছের কিছু রেখে এসেছি ঠিক আপনার অনুভূতিটাও তেমন সুন্দর একটি লেখা আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।