মায়ের লড়াই একটি ডিগ্রির জন্য

in hive-120823 •  2 months ago 

আসসালামু আলাইকুম
আজ ১৮ই জুন। মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন পর মানে ২৩ তারিখেই শুরু আমার ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। এই কয়েকদিন আগেও ভাবিনি এভাবে চাপ বাড়বে। কিন্তু দিন যতই এগিয়ে আসছে মনের ভিতরে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। চারদিকে কত কিছু সামলাতে হচ্ছে বাচ্চা সংসার নিজের শরীরের ক্লান্তি তার মাঝেও পড়াশোনাটা ছাড়তে পারছিনা। সেই সাথে গ্রামে এসে একের পর এক কাজ তো আছেই। মনের গভীরে একটা স্বপ্ন লুকিয়ে আছে একটা লক্ষ্য আমার ডিগ্রী কমপ্লিট করতেই হবে।। আমার একটা দুই বছরের মেয়ে আছে। ও যেন পুরো পৃথিবী জুড়ে আমার ভালবাসা। ওকে ঘিরেই আমার সকাল বিকাল রাত সব। কিন্তু পড়াশোনার সময় ওকে সামলানোটা সত্যি খুব কঠিন হয়ে যায়। বই খুললেই ওর কান্না শুরু।

IMG_20250618_173525.jpg

বলে আম্মু কোলে নাও, খেলতে যাব ঘুম পাচ্ছে। এইসব বলতে বলতে ওর চোখে অভিমান ভেসে ওঠে। অথচ আমি জানি ও কিছুই বোঝেনা। ও বোঝে না কেন ওর মা সারাক্ষণ বই নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে। আমরা এখন গ্রামে আছি। প্রায় ১৫-১৬ দিনেরও বেশি হচ্ছে এখানে এসেছি। শহরের তুলনায় গ্রামের কাজকর্ম অনেকটাই বেশি। শহরে থাকলে হয়তো এতটা কষ্ট হইত না। বাচ্চা সংসার সবকিছু সামলাইয়া যতটুকু সময় পাই বইটা হাতে নেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের জীবনে কোন কিছুই যেন সহজ নয় কিন্তু থেমে যেতেও তো পারি না। আমি জানি এইটা শুধু একটা সার্টিফিকেট না এটা আমার আত্মসম্মানের প্রতীক।আমি প্রমাণ করতে চাই একজন মা হওয়া মানেই জীবন থেমে যাওয়া নয়। বই খুলে বসেছি এমন সময় আমার মেয়ে কান্না শুরু করলো। ওর মুখটা দেখে মনে হচ্ছিল যেন আমি ওকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছি।। চোখে পানি ঠোট কাঁপছে দুহাত বাড়িয়ে বলছে আম্মু কোলে নাও। আমি বই রেখে ওকে কোলে তুলে নিলাম। কাঁধে মাথা রেখে কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ল।

IMG_20250618_173546.jpg

আমি চুপচাপ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। তখন ভাবছিলাম একদিন ও যখন বড় হবে বুঝবে ওর মা কতটা কষ্ট করে ত্যাগ করে তার ভবিষ্যতের জন্য পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিল। অনেকেই ভাবে বাচ্চা সামলে পড়াশোনা করা অসম্ভব। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যেখানে ইচ্ছা সেখানে পথ তৈরি হয়।। আমি হয়তো সবার মত দ্রুত পরতে পারি না কিন্তু প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও আমি এগিয়ে যাচ্ছি। কারণ আমি জানি ছোট্ট ছোট্ট পদক্ষেপই একদিন আমাকে পৌঁছে দেবে আমার গন্তব্যে। আমার হাজব্যান্ড আমাকে অনেক সাপোর্ট করে। ও মেয়েকে সামলে দেয় যাতে আমি একটু পড়তে পারি। ওর ভালোবাসা আমার পথ চলা কিছুটা হলেও সহজ করে দেয়। একজন মায়ের জন্য পড়াশোনাটা কতটা কষ্টকর সেটা একজন মা ছাড়া কেউ বোঝেনা। এই মুহূর্তে আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া চাই যেন সুস্থ থেকে মনোযোগ ধরে রেখে আমার পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে দিতে পারি।

IMG20250617220224.jpg

আমি জানি আমার লড়াইটা শুধু আমার না এটা আমার মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য। আমি চাই আমার মেয়ে একদিন গর্ব করে বলুক আমার মা হাল ছাড়েনি। পরীক্ষার দিনগুলো হয়তো খুব সহজ হবে না। মেয়েকে কার কাছে রাখবো কখন পড়বো কখন খাব সবমিলিয়ে চিন্তার বিশাল একটা পাহাড়। কিন্তু আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত। আমি জানি আমি পারবো ইনশাল্লাহ। মা হওয়া মানে শক্তি, ধৈর্য আর আত্মত্যাগের এক অনন্য উদাহরণ। আর সেই শক্তিতেই আমি এগিয়ে যাব। পরিশেষে আমার মত যারা সন্তান নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য একটি কথা আপনি একা নন। আপনি সংগ্রামী আপনি সাহসী। আপনার প্রতিটি পরা প্রতিটি ঘুমহীন রাত একদিন সাফল্য রূপ নেবে।

আজ তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

দুই বছরের বাচচাকে নিয়ে পড়াশোনা করাটা আসলেই খুব কঠিন।তারপরও যে আপ্নি হাল না ছেড়ে আপনার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন এটা খুবই প্রশংসনীয়।আপনার সন্তান একদিন আপনাকে নিয়ে গর্বিত হবে।
ঠিকই বলেছেন শহরের তুলনায় গ্রামে কাজ অনেক বেশি।শহরে থাক্লে আপনার জন্য সবকিছুআরও একটু সুবিধাজনক হতো ।
শুভকামনা রইল আপনার জন্য ।ভালো থাকবেন সবসময় ।

Thanks to his good work, he has earned a vote from the steemcurator09 team.



IMG-20250531-WA0001.jpg

thank you so much @pandora2010 mam

Loading...