নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
আমরা যারা ৯০ দশকের ছেলেমেয়ে তারা সকলেই আমার আজকে টপিকটার সাথে একটু বেশিই রিলেট করতে পারবেন, কারণ আমরা ৯০ দশকের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ যেমন পেয়েছি ঠিক তেমনি বর্তমান যুগের সাথেও আমরা দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছি। তবে খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে আমাদের শৈশবের সময়কালটা, আর আজকের দিনের বাচ্চাদের শৈশবকালটা কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন। সময় বদলেছে, যুগ পাল্টেছে, মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটেছে, সেই সাথে সাথে আমাদের অনেক নিয়ম-কানুন ও রীতিনীতি বদলেছে। পড়ানোর সুবাদে আমি খুব ভীষণভাবে লক্ষ্য করি যে এখনকার দিনের বাচ্চারা কিন্তু আগেকার দিনের বাচ্চাদের থেকে অনেক বেশি সংবেদনশীল। আগেকার দিনে বাচ্চারা অল্প কথাতেই ভেঙে পড়তো না। তবে এখনকার দিনের বাচ্চাদের একটু বকাবকি করলেই তারা যেন কেমন ভেঙে পড়ে। এখনকার বাচ্চারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ এবং খুব সহজেই মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে পড়ে। এর কারণ হিসেবে আমরা অনেকগুলো দিক আলোচনা করতে পারি। চলুন তাহলে সেই বিষয়েই আলোচনা করি।(আমি সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।)
শিশুরা যেহেতু প্রথম শিক্ষা পাই তার পরিবার থেকে তাই আমি প্রথমেই শিশুদের এরকম আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণ হিসেবে পরিবারকে দায়ী করব। আগেকার দিনের পরিবারগুলো ছিল যৌথ পরিবার। সেখানে বাচ্চারা একসঙ্গে অনেকগুলো ভাইবোন মিলেমিশে বড় হতো। তাদের মধ্যে মারামারি, খুনশুটি , ভালোবাসা সমস্ত কিছুই চলত এবং সেখান থেকে তারা নিজেদের আবেগকে কন্ট্রোল করতে শিখত। তাছাড়া তারা একাকীত্ব বোধ করত না। কাকিমা ,জেঠিমা ,ঠাকুমা সকলের সাথে মিলেমিশে তারা আনন্দের সঙ্গে দিন যাপন করত। তবে বর্তমানে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির কনসেপ্ট মানুষের মধ্যে গেঁথে গেছে। যার ফলে বাচ্চারা অনেক সময় একাকীতে ভোগে ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ে। বাচ্চারা যেহেতু কথা বলার মত কোন সঙ্গী পাইনা তারপরে তারা মনে মনে ভীষণ পরিমাণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেই দেখেছি, গত বছর একটি বাড়িতে আমি পড়ানো শুরু করি। সেই বাড়ির স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সরকারি চাকরি করেন। ফলত বাচ্চাটি ছুটির দিন ছাড়া মা-বাবাকে বেশি সময়ের জন্য কাছে পায় না। যার ফলে ওই বাচ্চাটির মধ্যে একটু একাকীত্ব বোধ ও সহজেই রেগে যাওয়া এই ধরনের প্রবণতা দেখা দিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত বাচ্চাদের এই আবেগপ্রবণ হওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করা যায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা কে। বর্তমানে মা-বাবারা নিজেদের কাছে অনেক বেশি সহজ করে নেওয়ার জন্য বাচ্চাদের সামনে মোবাইল, ট্যাবলেট ও টিভি চালিয়ে দেন। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা সেই জিনিসগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে বাবা মা রাও নিজেদের কাজ চালিয়ে যান। এর ফলে বাচ্চারা অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। এছাড়াও তারা মোবাইলে যা দেখছে সে বিষয়গুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠছে। এইসব সাইট থেকে তারা বিভিন্ন রকমের কনটেন্ট আত্মস্থ করে এবং সেগুলোকে কপি করার চেষ্টা করে। তবে বাস্তব জীবন তো সবসময় টিভি কিংবা মোবাইলে দেখা ভিডিওর মত রঙিন হয় না। তাই যখন তারা বাস্তব জীবনে সম্মুখীন হয়, তখন তারা আসল ততটাকে মেনে নিতে চায় না। যার ফলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়।
সেই সাথে আজকাল মা-বাবারা বাচ্চাদের ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের ভর্তির প্রতি আসক্ত হয়ে উঠেছে। বাংলা মিডিয়ামের তুলনায় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে বইয়ের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। সেই সাথে তাদের স্কুলের টাইমিং অনুযায়ী তারা বাড়িতে পড়াশোনা করার জন্য তুলনামূলক কম সময় পায়। এছাড়াও বাবা মা দের মনে প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার প্রবণতা থেকেই যায়। যার ফলে তারা বাচ্চাদের উপর অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি করে রেজাল্ট ভালো করার জন্য। তবে স্কুলের পড়াশোনা বাড়িতে পড়াশোনা বাদেও তাদেরকে আরো অনেক এক্সট্রা কারিকুলাম এর সাথে যুক্ত করা হয়। সেগুলোতেও তো অনেকটা সময় দিতে হয়। এর ফলে বাচ্চাটা খেলাধুলা করার সময় পায় না। আমরা জানি এই খেলাধুলা করলে বাচ্চাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি প্রখর হয়, শারীরিক উন্নতি হয়। তবে সেই সময়টাই যদি তারা না পাই তাহলে তাদের মানুষের বিকাশ কিছুটা হলেও পিছনে থেকে যায়।
সংবেদনশীল হওয়ার জন্য সবার প্রথমে প্রয়োজন নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু বর্তমানে বাচ্চারা নিজেদের আবেগকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারা তাদের রাগ, অভিমান, ভালোবাসা, ক্ষোভ, দুঃখ সমস্ত কিছুই খুব অত্যাধিক প্রকাশ করে ফেলে। এর পিছনে বাবা মায়ের ভূমিকা ও অনেক খানি থাকে। তারা অনেক সময় বাচ্চাদের সামনেই ঝগড়াঝাঁটি করে, খারাপ ভাষা ব্যবহার করে, কিংবা বাচ্চাদের অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেয়।
তাই এই ব্যবস্থা থেকে বাচ্চাদের বের করে আনা প্রয়োজন। তার জন্য পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে শিক্ষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের কাজের বাইরে বাচ্চাদেরকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। বাচ্চাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করতে হবে, তাদের কি সমস্যা হচ্ছে সেগুলো বুঝে তার সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে, সেই সাথে বাচ্চা যদি কোন সাজেশন দেয় সেটা শোনার চেষ্টা করতে হবে যাতে বাচ্চাটি নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাদের খানিকটা খেলার সময় দিতে হবে। তাছাড়া বাচ্চা যেটা করতে ভালোবাসে, সেইদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম। আপনারাও কি আমার সাথে সহমত অবশ্যই জানাবেন কমেন্টের মাধ্যমে। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।