অতি বৃষ্টি আমাদের কাছে আশীর্বাদ নয় বরং অভিশাপ

in hive-120823 •  11 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করার জন্য যা নিয়ে সকল সমাজপ্রেমী মানুষই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। চলুন আজকে তাহলে আপনাদের সাথে সেই বিষয়টি শেয়ার করি।

বৃষ্টি প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ, যা আমাদের কাছে আশীর্বাদ তুল্য। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা সকলেই বৃষ্টি কামনা করি। বৃষ্টি প্রকৃতিকে শীতল করে। বৃষ্টি প্রকৃতিকে যেমন ধুয়ে তাকে আরো সবুজ করে তোলে ঠিক তেমনি ভগবানের এই অমূল্য সম্পদ যেন মানুষের মনের কলুষতাকেও খানিকটা দূরীভূত করে। তাই বৃষ্টি নিয়ে কবি-সাহিত্যিক সকলেই অনেক অনেক কাব্য রচনা করেছেন। এই বৃষ্টির উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে হয়তো একটা গোটা বই লেখা যেতে পারে। তবে এই বৃষ্টি কি সব সময় আমাদের শুভ করে। কোন কিছুই অতিরিক্ত আমাদের সই না। তাই অতি বৃষ্টিও কিন্তু মোটেও শুভকর নয়। অতি বৃষ্টি আমাদের কাছে আশীর্বাদ নয় বরং অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। এই অতি বৃষ্টি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করে, আর্থিক দিক থেকে মানুষকে পিছিয়ে রাখে, সেই সাথে পরিবেশেরও কিন্তু অনেক ক্ষতি করে।

1000276385.jpg

বৃষ্টির দিনগুলোতে অনেক মানুষই ঘরে বসে মুখরোচক বিভিন্ন খাবার খেতে খেতে বৃষ্টি উপভোগ করেন। তবে বিশ্বাস করুন এই শ্রেণীর মানুষ কিন্তু খুবই সামান্য। যাদের দিন আনা , দিন খাওয়ার প্রয়োজন হয় না, যাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে, যাদের মাসের শেষে হাতে পর্যাপ্ত বেতন চলে আসে তাদের কাছে এই বৃষ্টির দিনগুলো খুবই উপভোগ্য হতে পারে। তবে যারা দিনমজুরি করে, অর্থাৎ দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষগুলো পরে বিপাকে। একদিনের বৃষ্টি তাদের রোজগারকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আর সেখানে যদি সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি চলতে থাকে তাহলে তাদের অবস্থা কেমন হয় ভাবুন তো। আমাদের এখানে বেশ কয়েকদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমাকে দিনমজুরি করতে হয় না ঠিকই, তবে আমাকেও কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যেই বাইরে বেরোতে হয়। যারা আপনারা আমার পোস্ট নিয়মিত পড়েন তারা জানেন আমি একজন গৃহ শিক্ষিকা। সুতরাং অন্যের বাড়িতে গিয়ে পড়ানোর জন্য আমাকে তো বৃষ্টি হোক আর বন্যা হোক বেরোতেই হবে। তাই প্রায় প্রত্যেকদিনই রেইনকোট পরে, অর্ধেক ভিজে আমাকে পড়াতে যেতে হচ্ছে। এটাও তো একটা কষ্টের ব্যাপার। তবে বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটা তো স্বাভাবিক। তাই বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে পড়ানো কামাই করতে আমি পছন্দ করি না।

1000276388.jpg

আমার কথা না হয় বাদ দিলাম। আমাকে শুধুমাত্র যাত্রাপথটুকুই কষ্ট করতে হয়। তারপরে তো ঘরে বসে পড়াই। কিন্তু অনেক মানুষকে রাস্তাতেই কাজ করতে হয়। তাদের হয়ে যায় মহা সমস্যা। গতকালকেই পড়াতে বেরিয়ে দেখি বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার উপরে যেই কাকু ডালপুরি বিক্রি করে তার বেহাল অবস্থা। দোকানে খরিদ্দার তো নেই, তার ওপর বৃষ্টির জল ঢুকে ঠেলাগাড়ির উপর থাকা সমস্ত কিছু ভিজে গেছে। দেখে ভারী কষ্ট লাগলো। এইতো একটা উদাহরণ দিলাম। আমাদের পাড়ায় বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুরির কাজ করে। তাদের বেশিরভাগই এই বৃষ্টির মধ্যে কাজে যেতে পারছে না। আর চাষবাসের কথা তো বলতেই হয়। যেখানে চাষীরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন বর্ষাকালের জন্য, সেখানে যদি এইরকম ভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয় তাহলে চাষের ক্ষেতের কি অবস্থা হয় তা তো আপনারা কল্পনা করতেই পারছেন। অর্ধেক চাষের জমি প্রায় ডুবে গেছে। চাষীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। আমাদের বাড়ির আশেপাশে সেইরকম চাষের জমি না থাকলেও, বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে তো খবর পাওয়ায় যায়। তাই বর্ষাকাল আমার ভালো লাগলেও এই অতিবৃষ্টি আমার একেবারেই পছন্দ নয়।

1000276378.jpg

আজকে দুপুরেও এত বৃষ্টি হল যে কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাদের পাড়ার রাস্তাটা পুরো জলমগ্ন হয়ে গেল। নিচু জায়গা গুলো এই বর্ষাকালে খুব তাড়াতাড়ি ভরে যায়। আমাদের পাড়ার গলিটাও একটু নিচু তাই পুরো পাড়ার জল এসে জমা হয়ে যায়। সেই জল নামতেও খানিকটা সময় লাগে। এই অতিবৃষ্টি কিন্তু বন্যার সংকেত। আমাদের পাড়ার সব জল কয়েক বছর আগেও বাড়ির সামনে থাকা একটি ডোবায় গিয়ে পড়তো। তবে সেই ডোবাটি বুজিয়ে ফেলা হয়েছে, যার ফলে এখন জল যাওয়ার জায়গা থাকে না। তাই রাস্তার ওপরেই বেশ কিছুক্ষণ জল আটকে থাকে। এটা আমাদের জন্য খুবই সমস্যা জনক।

1000276356.jpg

বর্ষাকাল আপনাদের কেমন লাগে অবশ্যই জানাবেন। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

একদমই তাই আমরা বাড়িতে বসে বাড়ির জানালা দিয়ে বৃষ্টির উপভোগ করি, প্রচন্ড গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্য বৃষ্টির দিনগুলো বেশ ভালই লাগছিলো। তাতে আবার প্রত্যেকদিন মুখরোচক খাবার খেতে আমার মত সকলেই ভালোবাসে। কিন্তু এই বৃষ্টি অনেকের কাছে অভিশাপ। আমি কিছুদিন আগেই গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে না গেলে হয়তো তাদের বৃষ্টি হলে কেমন দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে হয় সেটা জানতে পারতাম না। এমনও বাড়িঘর রয়েছে তাদের ঘরের সামনে প্রায় এক হাঁটু মতো জল জমে রয়েছে এছাড়াও অনেকের বাড়ি নিচের অংশটা মাটির তৈরি তারপরে তিন কিংবা ঝাপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া চাষের জমিগুলো জলে ডুবে গিয়েছে। কলা গাছের জমিতে অর্ধেক জল জমে রয়েছে। জল গুলো না শুকালে গাছগুলো মারা যাবে। বৃষ্টি হলে শহরের থেকে গ্রামের অবস্থা একদমই খারাপ হয়। ওদের কাছে বৃষ্টি যেমন আনন্দের তেমনি অভিশাপের।