আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
সোমবার, ১৪ই জুলাই ২০২৫ ইং
বর্ষা মানেই ছিল আমাদের কাছে এক উন্মাদনার সময়। স্কুল বন্ধ, মাঠ ভিজে একাকার, চারদিকে কুয়াশার মতো এক রকমের সুন্দর পরিবেশ। আমাদের গ্রামে বর্ষা এলেই জীবন যেন বদলে যেত। ফসলের মাঠে পানি জমে যেত, পাশের বিলে পানি উপচে পড়ত, আর তখনই শুরু হত আমাদের একটানা মাছ ধরার অভিযান।আমাদের পাড়ায় প্রায় দশ বারো জন ছেলে ছিল সবাই একেক বয়সের, কেউ ক্লাস থ্রি, কেউ ক্লাস সেভেন। আমরা ছিলাম এক দল। ভোর হলেই এক একজন গলা ফাটিয়ে ডেকে উঠত চলো, মাছ ধরতে চল। কারো হাতে গুলুই, বাঁশের তৈরি ফাঁদ, কেউবা ভাঙা একটা ঝাঁকি জাল নিয়ে হাজির। কেউ লুঙ্গি পেঁচিয়ে নেমে যেত কাদামাটির জলে, কেউ হাঁটু অব্দি কাদায় দাঁড়িয়ে একমনে খোঁজে চলত।
প্রথমবার গুলুই হাতে নিয়ে কাদায় বসে থাকতে থাকতে যখন একটা কৈ মাছ ঢুকে পড়ল, আমি এমন লাফিয়ে উঠেছিলাম যে পাশের বন্ধুর হাতের জাল উলটে দিয়ে ছিলাম। তখন সবাই হেসে গড়িয়ে পড়েছিল, আর আমি ভয়ে মাছটা ফেলে দিয়ে বলেছিলাম, এতটা লাফ দেবে কে জানত।সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ছিল ঝোপঝাড়ে মাছ খোঁজা। যেসব জায়গা বেশি কাদামাটি আর কচুরিপানায় ঢাকা থাকত, সেখানেই থাকত বড় বড় মাছ সিং, মাগুর, শোল, কখনোবা কেউ বাগারি ধরে নিয়ে আসত। ঝোপের নিচে হাত ঢুকিয়ে মাছ ধরার যে সাহস আমরা তখন দেখিয়েছি, এখন ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। তখন না ছিল ভয়, না ছিল কিছু হারানোর চিন্তা শুধু ছিল কে বেশি ধরবে সেই প্রতিযোগিতা।
একবার আমাদের বড় ভাই রাজু একটা বিশাল শোল মাছ ধরেছিল, একা পারছিল না, শেষে আমরা সবাই মিলে তাকে টেনে তুলেছিলাম। তারপর সবাই মিলে নেচে উঠেছিলাম যেন কোনো যুদ্ধ জিতে এসেছি। বিলের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা শোল মাছের সাথে ছবি তুলেছিলাম সাদা কালো ক্যামেরায়, যা এখনো আমাদের বাড়ির পুরনো অ্যালবামে আছে।দুপুরের খাবার ছিল আরেক আনন্দ। মাছ ধরা শেষে পাটখড়ি জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে সেই মাছ দিয়েই রান্না হতো ঝাল ঝোল। লবণ আর কাঁচা মরিচেই এমন স্বাদ, আজকের পাঁচতারা হোটেলেও মেলে না। ভাত ছাড়া শুধু মাছ খেয়েই যেন তৃপ্তি পেতাম। আর খাওয়ার পর সবাই দল বেঁধে বিলের জলে ঝাঁপিয়ে পড়তাম গোসলের জন্য। মাথায় কচুরিপানা দিয়ে একে অপরকে ভয় দেখানো, কেউ নিচে টেনে নেওয়ার ভান করে সবাইকে চমকে দেওয়া এসব ছিল বিলের জলের খেলাধুলা।
সন্ধ্যার আগে আগে বাড়ি ফিরতাম, সবার গায়ে কাদা, হাতে মাছের ঝুলি। মায়েরা তখন পুকুরে দাঁড়িয়ে থাকত আমাদের দেখার জন্য কে কতটা মাছ আনল আর কার অবস্থা সবচেয়ে কাদামাখা। হাসতে হাসতেই তারা আমাদের পরিস্কার করত, আর খাবার পাতে সেদিনের ধরা মাছের ঝোল পড়ত।এই ছোট ছোট স্মৃতিগুলোই এখন সবচেয়ে বড়। এখন আর কেউ বিলের জলে নামে না, সেই মাঠগুলোতে ঘরবাড়ি উঠেছে, আমাদের দল ছড়িয়ে পড়েছে শহরের ইট পাথরের জগতে। তবে, বর্ষার একফোঁটা বৃষ্টি পড়লেই চোখে ভাসে সেই ভেজা মাঠ, সজনে গাছের ছায়া, আর সেই কাদামাখা, মাছভরা শৈশব।এটা শুধু মাছ ধরা ছিল না এটা ছিল বন্ধুত্ব, সাহস, আনন্দ, আর এক টুকরো স্বর্গের স্মৃতি। যে স্মৃতি আমরা যতই বড় হই, ততই মনের ভিতর আরও বেশি করে জেগে ওঠে।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Device | iPhone 11 |
---|---|
Camera | 11+11 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার লেখায় শৈশবের আবেগ ও প্রকৃতির বর্ণনা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।পাড়ার ছেলেদের এবং বড় ভাই রাজু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আছে, কিন্তু যদি তাদের স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটু বিস্তারিত লিখতেন (যেমন কে সবচেয়ে সাহসী ছিল, কে মাছ ধরায় সবচেয়ে দক্ষ ছিল), তাহলে গল্পটি আরও প্রাণবন্ত হতো। সর্বোপরি ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/Riyadx2P/status/1944812631270854967?t=wTUC-eu3tusCzWzOAc6zWQ&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1944812441801470434?t=GGe_xQy2bnc6gri6GgYkMA&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit