নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? গতকাল আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনের একটি বিশেষ দিন সম্পর্কে শেয়ার করেছিলাম। আজকে আমি আপনাদের সাথে সেই গল্পের পরবর্তী পর্ব টি শেয়ার করতে চলেছি। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
আগের পোস্টে বলেছিলাম একটি পরীক্ষার কথা। যেটা বেশ কয়েক বছর পরে আমাদের রাজ্যে হচ্ছিল। আমার পরীক্ষার সিট পড়েছিল রানাঘাট কলেজে, যেটা আমাদের বাড়ি থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে। সৌভাগ্যবশত আমাদের পাড়ার আরো একটি মেয়ের পরীক্ষার সিট পড়েছিল একই কলেজে। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম আমরা একসাথে পরীক্ষা দিতে যাব। তাই ট্রেন ও বাসের ভিড় এড়াতে আমরা সকাল সকাল স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এবার আসি একটা টুইস্ট এ। সেদিন কিন্তু আমরা দুই বান্ধবী শুধুমাত্র যাইনি। তার সাথে গিয়েছিল শুভায়ন, মানে বর্তমানে যে আমার অফিসিয়ালি হাসবেন্ড। যদিও তখন আমরা কোনো রিলেশনে ছিলাম না। ২০২০ সালে কলেজ পাস আউট করার পর whatsapp এ অল্প স্বল্প কথা হতো মাত্র। মানে বন্ধুই ছিলাম। যদিও পরীক্ষার জন্য আমি আমার সাথে ওকে যেতে বলিনি। তাছাড়া ওকে বলবোই বা কেন! কোনো বন্ধুর কি সময় হবে সারাদিন আমার সাথে পরীক্ষার সেন্টারে গিয়ে বসে থাকার! তবে যেহেতু অনেক বছর পর পরীক্ষাটা হচ্ছিল তাই প্রায় সকলেই জানতো ১১ তারিখের এই পরীক্ষাটার ব্যাপারে। তারপর যখন ও জানতে পেরেছিল আমাদের রানাঘাটে সিট পড়েছে, আমাকে বলেছিল," আমার এক অফিস কলিগের বাড়ি রানাঘাটেই। অনেকদিন ধরে বলছিল আমাকে ওদের বাড়িতে যেতে, তবে সময় হচ্ছিল না। তোদের যখন 11 তারিখে পরীক্ষাটা রয়েছে, তাহলে চল সেদিন তোদের সাথেই যাই। তোরা পরীক্ষা দিতে চলে যাবি আর আমি আমার সেই অফিসের বন্ধুর বাড়ি চলে যাব।"
যেহেতু সেই দিন আমার বাড়ি থেকে কারোর যাওয়া সম্ভব ছিল না, তাই সঙ্গে কেউ একজন গেলে মন্দ হয় না, এই ভেবে আমিও আর আপত্তি করিনি। তাই সেই দিন সকালবেলায় আমরা তিনজনেই স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলাম। স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন ছাড়তে আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি। টিকিট কেটে অন্য দিকের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে পৌঁছতেই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল। ওরা দুজন ট্রেনে উঠে পড়লেও আমি উঠতে পারিনি। এই বিষয়ে আমার ভীষণ ভয়। তখন ওরা বলছিল "উঠে পড়, ট্রেন স্লো আছে।" তবে আমি এতটাই ভয় পাচ্ছিলাম যে প্রথমে উঠতে চাইছিলাম না, কিন্তু তারপর কি মনে হলো, দৌড়ে উঠতে গেলাম। কোনক্রমে ট্রেনে উঠে পড়েছিলাম কিন্তু উঠতে গিয়ে সামনের রডে হাঁটুতে ভীষণ লেগেছিল। যদিও ট্রেনটা সত্যি অনেক আসতে ছিল, যাদের অভ্যাস আছে তারা সহজেই উঠতে পারে, তবে আমার যেহেতু অভ্যাস নেই তাই ব্যথাটা পেয়েছিলাম।
Link
এরপর স্টেশনে নেমে, আমি শুভায়নকে বললাম, "তুই তাহলে এবার চলে যা, আমরা আমাদের এক্সাম সেন্টারে চলে যাব।" তখন আবার ও বলল,"এত সকাল সকাল কারোর বাড়ি যাওয়া যায় নাকি, বরং চল তোদের সাথে যাই, একটু বেলা হলে আমি বন্ধুর বাড়ি চলে যাব।" তাতেও আমরা আপত্তি করিনি। এতক্ষণ পর্যন্তও আমি সুস্থই ছিলাম। সেখানে পৌঁছে আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। ধীরে ধীরে আরো অনেক স্টুডেন্ট সেখানে আসে। তবে যেহেতু অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম তাই আস্তে আস্তে কেমন যেন টেনশন শুরু হতে শুরু করে। আমাদের পরীক্ষা শুরু হবে বারোটার সময়। তবে যেহেতু আমাদের কলেজে সিট পড়েছিল আর কলেজে রুম বেশি থাকাই স্টুডেন্ট সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল, তাই ভেরিফিকেশনের জন্য আমাদের নটা থেকে লাইন দিতে বলেছিল। যথারীতি লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। তবে সেদিন প্রচন্ড রোদ ছিল। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রোদে প্রায় মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা হচ্ছিল। শেষমেশ আমার আর একটুও এনার্জি ছিল না লাইনে দাঁড়ানোর। তখন শুভায়ন আমার হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিল। বেশ অনেকক্ষণ সময় ধরে আমার জন্যই ও লাইন দাঁড়িয়েছিল। খাবার, জল, ওষুধ সব খাইয়ে আমাকে একটু সুস্থ করেছিল। তারপর কলেজে ঢোকার মুখে ও লাইন থেকে বেরিয়ে যায় আর আমি সেখানে গিয়ে দাঁড়াই। এরপর আসে আবার ব্যাগ রাখার ঝামেলা। কলেজের ভিতরে ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। তাই আমি আর আমার বন্ধু শুভায়নের কাছেই ব্যাগ দিয়ে দিয়েছিলাম। সত্যিই ও যদি সেদিন আমাদের সাথে না যেত তাহলে হয়তো আমার পরীক্ষাটাই দেওয়া হতো না। কারণ প্রচন্ড রোদ আর টেনশনে আমার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক ওর কাছে ব্যাগ রেখে আমরা ভিতরে চলে গিয়েছিলাম।
সাড়ে দশটা নাগাদ আমরা কলেজের ভিতরে ঢুকি। তারপর ভেরিফিকেশন এর একটা লম্বা প্রক্রিয়া ছিল। সেই সব শেষ হতে আরো এক ঘন্টা লেগেছিল। অত বড় কলেজে বাইরে মাত্র একটা টয়লেট ছিল। সেখানেও ছিল লম্বা লাইন। তারপর ছিল চেকিং। এই সমস্ত কিছু সারার পর দেহে আর একটুও এনার্জি ছিল না। যাইহোক অবশেষে ক্লাসরুমে ঢুকতে পারি নির্দিষ্ট সময়ে। তারপর শুরু হয় চরম টেনশন। আর খুব টেনশনে আমার পেট খারাপ হয়ে যায়। এটা কার কার হয় আমি জানিনা তবে প্রথম থেকেই টেনশন হলেই, বিশেষ করে পরীক্ষা সংক্রান্ত টেনশন হলেই আমার এরকম পেট গুড় গুড় করে। অথচ কোন মতেই পরীক্ষা দিতে দিতে টয়লেটে যাওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু একবার যদি পেট খারাপ করে তাহলে তো টয়লেটে যেতেই হবে। আবার পরীক্ষাটাও যেন তেন প্রকারের শেষ করতে হবে। এ যে কি পরিমাণ অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম কি বলবো। শুধু ভাবছিলাম আমি যেন পরীক্ষাটা শেষ করতে পারি। যাইহোক, তিনটে ঘন্টা নিজেকে অনেক কন্ট্রোল করে, প্রচন্ড টেনশন এর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কি পরিমান টেনশন হয়েছিল সেটা বোঝানোর জন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি, একটা কোশ্চেন ছিল যেখানে IQ বের করতে হতো । সেখানে ২৫×৫= ৭৫ লিখেছিলাম। মানে বুঝতে পারছেন টেনশন হলে মানুষের চিন্তাশক্তি কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
যাইহোক, পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই আমি একেবারেই সুস্থ হয়ে গেলাম। যেন মাথার উপর থেকে একটা বড় বোঝা কেউ নামিয়ে নিল। তারপর পরীক্ষা শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখি শুভায়ন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সে আগেও তার সেই বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল কিনা এই বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদিও ও বলে ও গিয়েছিল তবে নিজের একটা ব্যাগ, সাথে আমাদের দুজনের দুটো ব্যাগ, সব মিলিয়ে তিনটে ব্যাগ নিয়ে ও কারোর বাড়ি গিয়েছিল এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সে যাই হোক, ছোট থেকে এত বড় হয়েছি তবে কোনদিন পরীক্ষার হলের বাইরে আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করেনি। তাই কেউ একজন এত সাহস যুগিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠিয়ে, বাইরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল ছিল। যদিও তখনও কিন্তু বন্ধুত্বই ছিল। যদিও এই ছোটো ছোটো বিষয়গুলোই পরবর্তীকালে একটা সম্পর্কের সূচনা করেছিল।
পরীক্ষা দেওয়ার পর আমরা কিছু খেয়ে নিয়েছিলাম। তারপর ট্রেন যেহেতু অনেকটা দেরিতে ছিল তাই আমরা একটা পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেইসব আপনাদের সাথে পরবর্তী পোস্টে শেয়ার করব।আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
You have been supported by the Team 02:
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit