![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আমাদের দেশ ঋতু বৈচিত্র অনুযায়ী এখন বর্ষাকাল । এই বর্ষা ঋতুতে যেমন ঝড় বৃষ্টিতে আম পড়ে তেমনি নদীতে প্রচুর পরিমানে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। কথায় বলে ”ইলশে গুড়ি বৃষ্টি”। কিন্তু বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকা শহরে যে বেহাল অবস্থা হয়ে রয়েছে ,তা একদমই ভালো লাগছে না। বৃষ্টি আমাদের ভালো লাগার থেকে সমস্যা দাঁড়িয়েছে বেশি । প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে ততটা বের হচ্ছি না ।
শুক্রবার ছুটির দিন আর বৃষ্টিতে সকাল বেলা উঠতেও আলসেমি লাগে তাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম ।উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের প্রার্থনা করে নিলাম। সকাল বেলা মেয়ে আমাদের জন্য চা তৈরি করেছে। মনে হচ্ছে মেয়েটা একটু একটু করে বড় হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মার প্রতি যত্ন নিতে শিখছে ,তা দেখে বেশ ভালই লাগছে ।বৃষ্টি হচ্ছিল তাই আর্মি বাবু বললেন , আজকে ইলিশ পোলাও করো অন্য কিছু করতে হবে না “।
আমার আবার ইলিশ মাছের কথা শুনলে জিভে জল এসে যায়। আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ তাই বলছি না , এই মাছের স্বাদ অন্যরকম। অন্য সমস্ত মাছ এক পাল্লায় থাকবে আর ইলিশ মাছ অন্য পাল্লায় থাকে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে ইলিশ মাছের পাল্লাটাই বেশি ভারি। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, ইলিশ মাছ ও চিংড়ি মাছ নিয়ে ঘটি ও বাঙ্গালীদের সেই কথা কাটাকাটি চলছে।
![]() |
---|
আমার বড় মাসির বিয়ে হয়েছে কলকাতা ।তার শ্বশুরবাড়ি হল ঘটি আর মাসি হলেন বাঙালি। মাসি বরাবরই ইলিশ মাছ পছন্দ করতেন। ঘটি পরিবার বলে, ইলিশ মাছ কি এমন মাছ ,শুধু কাটা আর কাটা। এত কাটার মাছ কি খাওয়া যায়? আবার মাসি উত্তরে বলেন, চিংড়ি আবার মাছ হল নাকি, এটা তো হল জলের পোকা, তোমরা তো জলের পোকা খাচ্ছ ।
তাদের এই মিষ্টি যুদ্ধ আজও চলে আসছে ।আজও মাসি বলে, যখন কলকাতায় আসবি তখন আমার জন্য পদ্মার ইলিশ নিয়ে আসবি। তবে ঘটি বাঙালির যুদ্ধ যাই হোক ইলিশ এবং চিংড়ি দুটোই আমার খুব প্রিয়। আমরা সকলেই জানি গোলাপ ফুলে কাটা থাকে তারপরেও গোলাপ হল ফুলের রাজা ।তেমনি ইলিশ মাছে অনেক কাটা থাকলেও ইলিশ হলো মাছের রাজা।
![]() | ![]() |
---|
কথায় আছে,” যে মাছে কাটা বেশি সে মাছের স্বাদ বেশি ” তাতো আমরা সকলেই জানি। কোন একদিন পরিমল গোস্বামী রেডিও কথিকায় বলেছিলেন ,”গীতায় শ্রী ভগবান বলেছিলেন ,আমায় যে যেভাবে ভজনা করুক না কেন আমি তাকে তুষ্ট করি আর ইলিশ বলে আমায় যে যেভাবে ভাজুক না কেন আমি তাকে সন্তুষ্ট করি”।
সত্যি বলতে, ইলিশ মাছ যেভাবে রান্না করুক না কেন খেতে খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে। ইলিশ মাছ রান্না করতে বেশি সময় লাগে না । আমি আজ ইলিশ পোলাও রান্না করলাম তবে আজকের ইলিশ পোলাও অন্যরকম ভাবে করেছি। আমার মা, মাসিদের শেখানো সেই ”ইলিশ পোলাও” আজ আর করিনি। তাদের ইলিশ পোলাও রান্নাটা অনেক সুস্বাদু হয় ।
কি বলবো ! বাংলাদেশের ইলিশ মাছের এত সুনাম পাওয়া গেলেও এর মূল্য কিন্তু অনেক বেশি ।দিনদিন ইলিশ মাছের মূল্য বেরেই যাচ্ছে ।১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছের মূল্য হল ৩০০০-৩৫০০ টাকা । এক কেজি ইলিশ মাছের দরে তিন কেজি খাসির মাংস পেতে পারি ।তারপরও ইলিশ মাছের স্বাদের তুলনা হয় না ।এখন আর আগের মতো ততটা ইলিশ মাছ কেনা হয় না ।মনে পড়ে ছোটবেলার কথা, বাবার যখন পোস্টিং ছিল বরিশাল জেলায় তখন আমাদের বাসা ছিল একদম বাজারের ভিতরে ।
বিকেল বেলা জেলে নদী থেকে মাছ ধরে নিয়ে আসছিল, বাসার সামনে থেকে সেই মাছ নিয়ে যাচ্ছিল বিক্রি করার জন্য। ইলিশ মাছগুলো বড় ছিল এবং প্রতিটি মাছের পেটে ডিম ছিল। একটি মাছের মূল্য ছিল মাত্র ৮৫ টাকা।মা ৮৫ টাকা দিয়ে একটি মাছ কিনেছিল আবার দেখা গেল বাবা অফিস থেকে ফেরার পথে সেই একই রকমের মাছ নিয়ে আসলো। তাও মাত্র ৮৫ টাকা দিয়ে।একদিনেই দুটো মাছ রান্না করা হলো কারণ তখন তো ফ্রিজ ছিল না বাসায় ।
এখন সেই মাছ হবে নিম্নতম চার হাজার টাকা। যাইহোক , পুরনো দিনের গল্প বলে তো এখন আর কাজ হবে না কারণ বর্তমানটাই মেনে নিতে হবে ।তবে সেই দিনের মাছের স্বাদ ,গন্ধ এখন ততটা পাওয়া যায় না ।আজকের মাছটি ততটা বড় ছিলনা ।মাছটির মূল্য ছিল ১৮০০ টাকা । লেজ এবং মাথা নিয়ে নয় টুকরা হল ।
যাই হোক, আজ আমি রান্না করেছিলাম ইউটিউব দেখে। Atanur Rannaghar রেসিপি দেখে করেছি ।মাছটা কেটে ভালো করে ধুয়ে নিয়েছি। আমরা পরিবারে তিনজন সদস্য তাই ৬ টুকরা মাছ নিলাম ,সাথে ৬ চামচ টক দই, এক চামচ আদা বাটা, আধা চামচ রসুন বাটা, দুই চামচ কাঁচামরিচ বাটা, জিরা বাটা, ধনিয়া বাটা, স্বাদমতো লবণ ,অল্প সাদা তেল এবং কালারের জন্য শুকনা মরিচের গুড়া ১ চামচ নিলাম।
![]() | ![]() |
---|
সমস্ত কিছু দিয়ে ভালো করে ফাটিয়ে নিলাম। এই মিশ্রণটির সাথে মাছগুলো ভালো করে মেখে দশ মিনিটের জন্য ঢেকে রাখলাম । ৫০০ গ্রাম চিনিগুড়া চাল নিলাম, চালটা ভালো করে ধুয়ে এক ঘন্টা আগে ভিজিয়ে রেখেছি ।এবার যে পাত্রে পোলাও রান্না করব সেই পাত্রে সয়াবিন তেল দিলাম। দুটো বড় সাইজের পেঁয়াজ কুচি ভেজে বেরেস্তা করে নিলাম ।অতিরিক্ত তেল উঠিয়ে রাখলাম। গরম তেলের ভিতরে মেরিনেট করা মাছগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিলাম ।
মিডিয়াম জ্বালে মাছগুলো ভালো করে রান্না করতে হবে। এক পাশ হয়ে গেলে আলতো ভাবে মাছগুলো উল্টিয়ে দিতে হবে ।লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মাছগুলো ভেঙে না যায় । অতিরিক্ত জ্বাল দিলে মাছ পাত্রের সাথে লেগে যেতে পারে। যখন মাছ ৯০% রান্না হয়ে যাবে তখন মাছ তুলে রাখলাম। এর সাথে কিছু গ্রেবিও তুলে রাখলাম ।বাকি গ্রেবির সাথে সেই ভিজিয়ে রাখা চাল গুলো জল ঝরিয়ে দিয়ে দিলাম। ভালো করে ভেজে নিতে হবে।
যখন চাল ঝরঝরে হয়ে আসবে তখন এক লিটার জল দিয়ে দিব ।তখন চুলার জ্বাল হাই হিটে থাকবে ।উপর থেকে কিছু কাঁচামরিচ দিলাম এবং কিছু পিয়াজ বেরেস্তা ছিটিয়ে দিলাম। এভাবে তিন মিনিট ফুটবে। যখন ফুটে আসবে তখন চুলার জ্বাল মিডিয়াম রেখে চাল ৯০% সিদ্ধ করে নিব ।যখন ৯০% সেদ্ধ হয়ে আসবে তখন মাছগুলো উপর থেকে সাজিয়ে দেব ।আবার পিয়াজ বেরেস্তা দিয়ে দেবো এবং দশ মিনিট দমে রাখব ।
![]() |
---|
তৈরি হয়ে গেল আমার সুস্বাদু ইলিশ পোলাও। সত্যি বলছি, নতুন ধরনের পোলাও রান্নাটা আমার কাছে বেশ লেগেছে ।মেয়ে খুব পছন্দ করেছে । যারা চিনি পছন্দ করে তারা অল্প সামান্য চিনিও দিতে পারেন। আর্মি বাবু বললেন এটা ”ইলিশ পোলাও” হলো না ”ইলিশ বিরায়ানি” হল । একটু সাদা সাদা ভাব এসেছে তাই বলছেন কারণ আমাদের মা-মাসিরা সব সময় হলুদ রঙের ইলিশ পোলাও রান্না করেন।
![]() |
---|
আজকে রান্নায় কোন হলুদ ব্যবহার করিনি। যাইহোক আমরা খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিলাম। যেহেতু শুক্রবার ,সবাই বাসায় থাকে , কাজও থাকে বেশি তাই সেরকম তেমন ছবি তোলা হয়নি । তোমাদের সাথে শেয়ার করতে পারছিনা। তোমরা কিভাবে তোমাদের ছুটির দিন কাটাও? বর্ষার দিন কেমন কাটছে তোমাদের? তা জানিয়ে অবশ্যই মন্তব্য লিখতে পারো। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সকলে ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thank you, Sir.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit